কারক কাকে বলে

প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা আজকের এই পোস্টে কারক কাকে বলে ? কারকের শ্রেণীবিভাগ ও উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কারক বাংলা ব্যাকরণের খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ। বাংলা ব্যাকরণে ভালো নম্বর পেতে কারক সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন তাই আসুন কারক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কারক কাকে বলে

কোনো বাক‍্যে ক্রিয়া পদের সঙ্গে নামপদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। যেমন- রহিম মাঠে খেলে। এখানে খেলে হলাে ক্রিয়াপদ এবং রহিম একটি নামপদ। এই বাক্যে খেলে ক্রিয়াপদের সঙ্গে রহিম নাম পদের একটি সম্পর্ক রয়েছে। 

কারক শব্দের অর্থ কি

কারক শব্দের অর্থ হল যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। কারক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হল কৃ + ণক (অক), এখানে ‘কৃ’ ধাতুর অর্থ হলাে করা এবং ‘ণক’ বা ‘অক’- এর অর্থ হলাে সম্পাদন। অর্থাৎ কারক কথার ব্যুৎপত্তি গত অর্থ হলাে- যা ক্রিয়া সম্পদান করে।

কারকের প্রকারভেদ

বাংলা ভাষায় বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের ছয় প্রকারের সম্পর্ক হয়ে থাকে। 
কারক প্রধানত ৬ প্রকার যথা -

  • কর্তৃকারক
  • কর্মকারক
  • করণ কারক
  • সম্প্রদান কারক
  • অপাদান কারক 
  • অধিকরণ কারক

কর্তৃকারক

বাক্যে যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তা বলে। বাক্যে কর্তার সঙ্গে ক্রিয়াপদের যে সম্পর্ক তাকেই কর্তৃকারক বলে। যেমন: আমি ভাত খাই - এই বাক্যে আমি হলো কর্তৃকারক।

কর্তৃকারকের প্রকারভেদ

কর্তৃকারকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায় যথা – 
মুখ্য কর্তা : যে কর্তা নিজে নিজেই ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে মুখ্য কর্তা বলে
প্রযোজক কর্তা: যখন কর্তা অন্য কাউকে কোনো কাজে নিয়োজিত করে তা সম্পন্ন করে তখন তাকে প্রযােজক কর্তা বলে।
প্রযোজ্য কর্তা: কর্তা যাকে দিয়ে কার্য সম্পাদন করে তাকে প্রযােজ্য কর্তা বলে।
ব্যতিহার কর্তা: কোনো বাক্যে যদি দুটি কর্তা একত্রে একই জাতীয় কার্য সম্পন্ন করে তখন তাকে ব্যতিহার কর্তা বলে

কর্তৃকারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে ‘কে’ বা 'কারা' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় তা কর্তৃকারক। যেমন: তপন খেলছে - কে খেলছে? তপন খেলছে সুতরাং তপন কর্তৃকারক।

কর্মকারক

কর্তা যাকে আশ্রয় করে কোনো কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মকারক বলে। যেমন – আকাশ বই পড়ে। এখানে বই হলাে কর্ম। কারণ বইকে আশ্রয় করে আকাশ অর্থাৎ কর্তা এখানে কাজ সম্পন্ন করেছে।

কর্মকারকের প্রকারভেদ

কর্ম কারকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম
  • প্রযোজক ক্রিয়ার কর্ম
  • সমধাতুজ কর্ম
  • উদ্দেশ্য ও বিধেয়

মুখ্যকর্ম এবং গৌণকর্ম

কোনাে বাক্যে দুটি কর্ম থাকলে অপ্রাণীবাচক বা বস্তুবাচক কর্মটিকে মুখ্য কর্ম এবং প্রাণীবাচক কর্মটিকে গৌন কর্ম বলে।

কর্মকারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে "কী" বা "কাকে" দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় তাই হল কর্মকারক। যেমন: ছেলেরা ফুটবল খেলছে - কী খেলছে? ফুটবল সুতরাং ফুটবল হল কর্মকারক।

করণ কারক

কর্তা যার দ্বারা বা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে করণকারক বলে। যেমন: আমরা চোখ দিয়ে দেখি - এই চোখ দ্বারা ক্রিয়া(দেখি) সম্পাদিত হচ্ছে সুতরাং চোখ হল করণ কারক।

করণ কারকের প্রকারভেদ

করণ কারককে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 

  • যন্ত্রাত্মক করণ
  • উপায়াত্মক করণ
  • হেতুময় করণ
  • কালাত্মক করণ
  • লক্ষণাত্মক করণ
  • সমধাতুজ করণ 
  • করণের বীপ্সা

করণকারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে "কী দিয়ে" বা "কার দ্বারা" দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটি হল করণকারক। যেমন: আমরা ডান হাত দিয়ে লিখি - কি দিয়ে লিখি? ডানহাত সুতরাং ডানহাত হল করণকারক।

সম্প্রদান কারক

যখন কোন বাক্যে স্বত্ব ত্যাগ করে কোনাে কিছু দান, অর্চনা, সাহায্য ইত্যাদি করা হয় তাকে সম্প্রদান কারক বলে। যেমন: ভিক্ষারীকে ভিক্ষা দাও। এই বাক্যে ভিক্ষারীকে সম্প্রদান কারক।

অপাদান কারক 

যা থেকে কোন কিছু উৎপত্তি বিচ্যুত, গৃহীত, জাত, বিরত, আরম্ভ, দূরীভূত ও রক্ষিত হওয়া ইত্যাদি বোঝায় তাকে অপাদান কারক বলে। যেমন: মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়, ফুল থেকে ফল হয়। এখানে 'মেঘ' এবং 'ফুল' অপাদান কারক।

অপাদান কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে থেকে, হইতে, দিয়া, নিকট, অপেক্ষা দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটি হল অপাদান কারক। যেমন: ফুল থেকে ফল হয় - কি থেকে ফল হয়? ফুল সুতরাং ফুল হল অপাদান কারক।

অধিকরণ কারক

বাক্যে ক্রিয়ার কাল বা আধারকে অধিকরণ কারক বলে। অর্থাৎ বাক্যে যে স্থান বা সময় কে আশ্রয় করে কর্তা তার কার্য সম্পন্ন করে সেই সময় বা স্থানকে অধিকরণ কারক বলে। যেমন: রাতে চাঁদ ওঠে - কখন চাঁদ ওঠে? রাতে সুতরাং রাতে হলো অধিকরণ কারক।

অধিকরণ কারক চেনার উপায়

বাক্যের ক্রিয়াকে কোথায়, কখন, কী বিষয় দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটি হল অধিকরণকারক। যেমন: নীল আকাশে মেঘ ভাসছে - কোথায় মেঘ ভাসছে? আকাশে সুতরাং আকাশ হল অধিকরণ কারক।

FAQ on কারক 

কারক শব্দের অর্থ কি?
কারক শব্দের অর্থ হল যা ক্রিয়া সম্পাদন করে।

কারক শব্দের ব্যুৎপত্তি কি?
কারক শব্দের ব্যুৎপত্তি হল কৃ + ণক (অক)

কারক কত প্রকার?
কারক ৬ প্রকার যথা - কর্তৃকারক, কর্মকারক, করণ কারক, সম্প্রদান কারক, অপাদান কারক ও অধিকরণ কারক।

সম্বন্ধ পদ কারক নয় কেন?
সম্বন্ধ পদ কারক নয় কারণ সম্বন্ধপদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন