পদ কাকে বলে

পদ কাকে বলে

বাংলা ভাষায় দুই বা ততোধিক শব্দ মিলে একটি বাক্য গঠন হয়। যে সকল বিভক্তিযুক্ত অর্থবােধক শব্দ বাক্য গঠনে ব্যবহৃত হয় সেগুলি প্রত্যেকটি এক একটি পদ অর্থাৎ যখন কোনো শব্দ বা ধাতু বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্য ব্যবহৃত হয় তখন তাকে পদ বলে। যেমন: যেমন আমি স্কুলে যাই। এই বাক্যে আমি, স্কুলে, যাই প্রত্যেকটি এক একটি পদ এখানে আমি হল সর্বনাম পদ, স্কুল হল বিশেষ্য পদ এবং যাই হল ক্রিয়াপদ।

পদ প্রকরণ কাকে বলে

বাংলা ব্যাকরণের যে অংশে শব্দ, শব্দ গঠন, শব্দের শ্রেণী বিভাগ, কারক, সমাস, ক্রিয়া, ক্রিয়ার কাল, পদ, প্রত্যয়, বচন, শব্দের ও পদের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় ইত্যাদি আলোচনা করা হয় তাকে পদ প্রকরণ বলে।

নাম পদ কাকে বলে

শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে পদ গঠন করে তাকে নাম পদ বলে যেমন: আমি স্কুলে যাই এই বাক্যে স্কুলে হল একটি নামপদ কারণ এখানে স্কুল শব্দটির সঙ্গে ‘এ ‘ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে ফলে নাম পদ তৈরি হয়েছে।

নাম পদের শ্রেণীবিভাগ
নাম পদকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ১. বিশেষ্য ২. বিশেষণ ৩. সর্বনাম ৪. অব্যয়।

বিশেষ্য পদ কাকে বলে

যে সমস্ত পদ কোনো কিছুর নামকে নির্দেশ করে অর্থাৎ বাক্যে ব্যবহৃত যে সকল পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, সমষ্টি, কর্ম, ভাব, কাল বা গুণের নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে।
উদাহরণ: আকাশ, দিল্লি, কলকাতা, গঙ্গা, যমুনা, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, হিমালয় ইত্যাদি।

বিশেষ্য পদের প্রকারভেদ

বিশেষ্য পদ ছয় প্রকার যথা - 
  • ১.ব্যক্তিবাচক 
  • ২.বস্তুবাচক 
  • ৩.জাতিবাচক 
  • ৪.গুণবাচক 
  • ৫.সমষ্টিবাচক 
  • ৬.ক্রিয়াবাচক

সংজ্ঞা বা নামবাচক বিশেষ্য- যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, কাল, দেশ, পর্বত, নদী, গ্রন্থ প্রভৃতির নাম বোঝানো হয় তাকেই সংজ্ঞাবাচক বা নামবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: রাম, শ্যাম, রহিম, করিম, দিল্লি, কলকাতা, গঙ্গা, যমুনা ইত্যাদি।

বস্তুবাচক বিশেষ্য– যে পদের দ্বারা কোনো বস্তুর নামকে বোঝানো হয় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন: বই, খাতা, পেন, গাছ, সোনা, রুপা ইত্যাদি।

জাতিবাচক বিশেষ্য- যে বিশেষ্যের দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা বস্তু বা প্রাণীকে বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: বাঘ, সিংহ, হাতি, পাহার, নদী, হিন্দু, মুসলিম ইত্যাদি।

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য– যে পদ কোনো কিছুর সমষ্টিকে বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: দল, সভা, সমিতি, শ্রেণি, ঝাঁক ইত্যাদি।

গুণবাচক বিশেষ্য– যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর দোষ, গুণ, অবস্থা ও ভাবের নাম বোঝানো হয় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সুখ, দুঃখ, রাগ, কাতর, মমতা, হিংসা, ঘৃণা ইত্যাদি।

ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য- যে বিশেষ্য পদ কোনো কার্যের নামকে বোঝানো হয় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন - ভ্রমণ, দর্শন, পঠন, লিখন ইত্যাদি।

বিশেষণ পদ কাকে বলে 

বাক্যে ব্যবহৃত যে সকল পদ দ্বারা বিশেষ্য, সর্বনাম, অব্যয়, ক্রিয়া ইত্যাদি পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি নির্দেশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন: ভালো ছেলে, ছোট নদী, বুদ্ধিমান মেয়ে ইত্যাদি।

বিশেষণ পদের শ্রেণীবিভাগ

বিশেষণ পদকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়, যথা - 
  • ১. বিশেষ্যের বিশেষণ 
  • ২. বিশেষণের বিশেষণ 
  • ৩. ক্রিয়া বিশেষণ 
  • ৪. সর্বনামের বিশেষণ 
  • ৫. অব্যয়ের বিশেষণ

বিশেষ্যের বিশেষণ পদ: যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ, ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে। যেমন: বুদ্ধিমান লোক, মেঘলা সকাল, অনেক ছেলে, ভালো ছাত্রী।

সর্বনামের বিশেষণ: যখন কোন বিশেষণ পদ সর্বনাম পদের গুণ, প্রকৃতি ইত্যাদি বোঝায় তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে। যেমন— বোকা তুমি, তাই ওদের কথা বিশ্বাস করলে, মূর্খ তুই, এ কথার কী বুঝবি?

বিশেষণের বিশেষণ: যে পদের দ্বারা অন্য কোনো বিশেষণ পদের গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন—খুব গরম চা, নিতান্ত ভালো ছেলে, ট্রেন অতি দ্রুত চলে।

অব্যয়ের বিশেষণ: বিশেষণ পদে যখন কোনো অব্যয় পদের গুণ, অবস্থা, সংখ্যা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন—ঠিক নীচে, শত ধিক্‌, ঠিক ওপরে দেখতে পাবে।

ক্রিয়ার বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ ক্রিয়ার অবস্থা, গুন ইত্যাদি নির্ণয় করা যায় তাকে ক্রিয়ার বিশেষণ বলে। যেমন—সে তাড়াতাড়ি কথা বলে, রিয়া আস্তে আস্তে হাটে। পরে একবার এসো।

সর্বনাম পদ কাকে বলে 

বাক্যে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে।যেমন: আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, এই, ঐ, ইনি, তিনি, তাহারা, সব, সকল, ইহারা ইত্যাদি।

বাক্যে একই বিশেষ্য পদ বহুবার ব্যবহৃত হলে বাক্যের সৌন্দর্য হানি ঘটে এই জন্য পূর্বে ব্যবহৃত কোনো বিশেষ্য পদের পুনরুল্লেখ না করে তার পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয়।

সর্বনাম পদ কত প্রকার

সর্বনাম পদ আট প্রকার যথা - 
  • ১. ব্যক্তিবাচক 
  • ২. নির্দেশক 
  • ৩. অনির্দেশক 
  • ৪. প্রশ্নবাচক 
  • ৫. আত্মবাচক 
  • ৬. সমষ্টিবাচক 
  • ৭. সাপেক্ষ 
  • ৮. পারস্পরিক

ব্যক্তিবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম কোনো ব্যক্তির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় তাকে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বলে। যেমন: আমি, তুমি, আমরা, তোমরা, সে, তিনি, তারা, তাহারা, তাঁরা, এরা, এ, ও, ওরা ইত্যাদি।

নির্দেশক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদ কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে নির্দেশ করে তাকে নির্দেশক সর্বনাম। যেমন: ইনি, উনি, এটি, সেটি, ওটা, এই, ওই প্রভৃতি।

অনির্দেশক সর্বনাম: যে সকল সর্বনাম পদ কোনো নির্দিষ্ট কিছুকে নির্দেশ করে না। তাদের অনির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন: কেউ, কেহ, কেউ কেউ প্রভৃতি।

প্রশ্নবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদের দ্বারা কোনো প্রশ্ন করা হয় তাকে প্রশ্নবাচক সর্বনাম বলে। যেমন: কে, কী, কি, কোনটা, কাহার, কেন, কোন, কিসে, কার ইত্যাদি।

আত্মবাচক সর্বনাম: যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশ করে সেই পদকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে। যেমন: নিজে নিজে, স্বয়ং, আপনি প্রভৃতি।

সম্বন্ধসূচক সর্বনাম: যখন কোন সর্বনাম পদ অন্য পদের সঙ্গে সম্বন্ধ প্রকাশ করে তাদের সম্বন্ধসূচক সর্বনাম বলে। যেমন: তার, তাঁহার, নিজের প্রভৃতি।

সমষ্টিবাচক বা সাকুল্যবাচক সর্বনাম: যে পদ সকল বা সমস্ত কিছু বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক সর্বনাম বলে। যেমন: সকলের, সকলে, সমস্ত, উভয়, উভয়কে, সমুদয়, তাবৎ প্রভৃতি।

সাপেক্ষ সর্বনাম: যে পদগুলি একে অন্যের সঙ্গে যুগ্মভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে। যেমন: যে-সে, যার-তার, যিনি-তিনি, যা-তা প্রভৃতি।

অব্যয় পদ কাকে বলে 

যে সকল পদ বাক্যে ব্যবহারের সময় লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তিতে কোন পরিবর্তন হয়না তাকে অব্যয় পদ বলে। যথা: বিনা, বাঃ, এবং, কিন্তু ইত্যাদি।

যেমন- দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় না।, বাঃ! কী দারুণ দৃশ্য। রহিম এবং করিম বন গমন করেছিলেন। তোমার কিন্তু অবশ্যই যাওয়া চাই। এখানে বিনা, বাঃ, এবং, কিন্তু ইত্যাদি পদগুলির দ্বারা কোনো না কোনো ভাব প্রকাশ পেয়েছে। এই পদগুলি দুটি বাক্যের মধ্যে সমন্ধ স্থাপন করেছে এবং এই পদগুলির লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অব্যয় ছাড়া অন্য সমস্ত পদেরই লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তিতে পরিবর্তন ঘটে।

অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ

অব্যয় পদ তিন প্রকারের। যথা - 
  • ১. পদাম্বয়ী 
  • ২. বাক্যাম্বয়ী 
  • ৩. অনম্বয়ী

পদান্বয়ী অব্যয়: যে অব্যয় পদ বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের এক পদের সঙ্গে অন্য পদের অন্বয় বা সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন—দুঃখ ব্যতীত সুখ লাভ হয় না। রমেশ ও সুরেশ আজ ক্রিকেট খেলবে।

অনন্বয়ী অব্যয়: যে অব্যয় পদের সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কোনো সম্পর্ক নেই মনের ঘৃণা, ভয়, বিষয়, হর্ষ ইত্যাদি ভাবপ্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয় তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন - বাঃ! কী মনোরম দৃশ্য ! হায় হায়! আমার কপালে শেষে এই ছিল? মা, আমাকে আশীবাদ করো।

সমুচ্চয়ী অব্যয়: যে অব্যয় পদের সঙ্গে একাধিক পদ, বাক্যাংশ বা বাক্য সংযোজন ও বিয়োজন ঘটে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

ক্রিয়া পদ কাকে বলে 

বাক্যের অন্তর্গত যে পদের দ্বারা কোন কাজ সম্পন্ন হওয়া বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। অর্থাৎ যে সব পদ দ্বারা বিশেষ্যের করা, যাওয়া, আসা, হওয়া, খাওয়া ইত্যাদি বুঝায় তখন তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন: পড়ছে, খেলছে, হাঁটছে, খাচ্ছে, উঠলে, যেয়ে, গিয়ে, ইত্যাদি। 

ক্রিয়া পদের শ্রেণীবিভাগ

সমাপিকা ক্রিয়া- যে ক্রিয়াপদের দ্বারা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে বাড়ী এসে পড়তে যাবে।

অসমাপিকা ক্রিয়া- যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: সে বাড়ী এসে…

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন