গ্রীষ্মকাল রচনা

ভূমিকা 

আমাদের দেশে ছয়টি ঋতু দেখা যায় এই ছয়টি ঋতুর মধ্যে বছরের প্রথম ও উষ্ণতম ঋতু হল গ্রীষ্মকাল। আমাদের দেশে বছরের শুরুতেই বৈশাখ এবং জৈষ্ঠ্য মাসে গ্রীষ্মকালের আগমন ঘটে। এই সময় সূর্যের তাপ এত প্রখর হয় যে চারিদিক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের অনুভূতি তেমন মনোরম না হলেও গ্রীষ্মকাল নানা বৈচিত্র্যে বৈচিত্রময়। সর্বোপরি প্রকৃতির কাছে এই গ্রীষ্মের দান অনেক।

সময়সীমা

বাংলা ক্যালেন্ডারের বছরের প্রথম ঋতু হল গ্রীষ্মকাল আর এই গ্রীষ্মের মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিই। বাংলা মাসের বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য এই দুই মাস নিয়ে হয় গ্রীষ্মকাল এবং ইংরেজি মাসের মার্চের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত এই ঋতু বিরাজ করে। এই সময় সূর্যের উত্তরায়ণ ঘটে ফলে উত্তর গোলার্ধে থাকা আমাদের দেশে উষ্ণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং দিন বড় ও রাত ছোট হতে থাকে।

গ্রীষ্মের প্রাকৃতিক রূপ

চৈত্র মাসের মাঝমাঝি থেকেই বসন্ত তার বিদায় জানিয়ে গ্রীষ্মের আগমন ঘটে। বসন্তের বাতাসে একটু একটু করে মিশতে থাকে উষ্ণতার ছোঁয়া। সূর্য তার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে। সূর্যের তাপ যেন পুকুর, ডোবা, নদী, খাল বিলের জল শুষে নিতে থাকে। অসহ্য গরমে ও জলের অভাবে মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীরা প্রচণ্ড কষ্ট পায়। মানুষ দুপুরে পরিশ্রম করতে পারে না কৃষকেরা মাঠ ছেড়ে ছায়ায় আশ্রয় নেয়। এই সময় মাঝে মাঝে বজ্রবৃষ্টি সহ কালবৈশাখী ঝড় হয় যার কারনে অনেক ঘরবাড়ি ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধন হয়।

গ্রীষ্মকালীন ফলফুল ও শাকসব্জি

গ্রীষ্মকাল হল ফলফুলের ঋতু, এই সময় নানান ধরনের ফল ফুল পাওয়া যায়। আমাদের দেশের জাতীয় ফল আমের ফলন এই গ্রীষ্মকালেই হয় এছাড়াও বিভিন্ন রসালো ফল যেমন- জাম, কাঠাল, লিচু, তরমুজ, আঙ্গুর, আনারস প্রভৃতি ফল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল যেমন - বেল, জুঁই, রজনীগন্ধা, চাপা, গন্ধরাজ, টগর প্রভৃতি ফুল ফোটে। শাকসবজির মধ্যে পাওয়া যায় উচ্ছে, পটল, কুমড়ো, ঝিঙে প্রভৃতি শাক সবজি পাওয়া যায়।

উৎসব ও অনুষ্ঠান

গ্রীষ্মকালে চরম দাবদাহের মধ্যেও মানুষ মেতে ওঠেন নানান উৎসব ও অনুষ্ঠানে। গ্রীষ্মকালের শুরুতেই পালন করা হয় বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ যা বাঙালির জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন উৎসব। বৈশাখ মাসের ২৫ তারিখে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালন করা হয় যা শুধু বাংলারই নয় সমগ্র ভারতের অন্যতম উৎসব। এই সময় গ্রামে গ্রামে বৈশাখী মেলা বসে। এই সময় পালিত হয় জামায়ষষ্ঠী ঘরে ঘরে থাকে উৎসবের আমেজ।

উপকারিতা

গ্রীষ্মকালে দিন বড় হওয়ার কারণে মানুষের হাতে অনেক সময় থাকে ফলে মানুষ অনেক কাজ করতে পারে। এছাড়া এই মরশুমে প্রচুর সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে অনেকে পরিবারের সাথে সমুদ্র সৈকতে বা পাহাড়ে বেড়াতে যান এছাড়া গ্রীষ্মকালের শুরুতেই বাংলা নববর্ষ পালন করা হয়। 

অপকারিতা

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের কারনে মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীরা প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করে। সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপে খালবিল, নদীনালা সব শুকিয়ে যায়। চারিদিক জল সংকট দেখা যায় জলের অভাবে চাষ আবাদে ক্ষতি হয়। এই সময় মশা মাছির উৎপাত বাড়ে ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরা প্রভৃতি রোগ হবার সম্ভাবনা বাড়ে। বৈশাখ মাসে বিকালে মাঝে মাঝে কাল বৈশাখী ঝড় হয় যার কারনে প্রচুর ঘরবাড়ি নষ্ট হয় জীবনহানি ঘটে।

উপসংহার

গ্রীষ্মকালের তাপ এবং দাবদাহ আমাদের কষ্ট দিলেও গ্রীষ্মের জন্যই আমরা শীতকালের আমেজ অনুভব করতে পারি। গ্রীষ্মকালেই আমরা সবুজ শাকসবজি ফলমূল উপভোগ করি নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। গ্রীষ্ম ঋতু বয়ে আনে রং ও প্রাণের বাহার তাই তো বারবার প্রতিবার বলবো "এসো হে বৈশাখ এসো এসো"।

আরও পড়ুনঃ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন