বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ) গল্পের প্রশ্ন উত্তর - মাধ্যমিক বাংলা 2026

মাধ্যমিক বাংলা দ্বিতীয় অধ্যায় বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণীর বাংলা বহুরূপী গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে
বহুরূপী (সুবোধ ঘোষ) গল্পের প্রশ্ন উত্তর - মাধ্যমিক বাংলা 2026

মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর 

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, আজকের আমরা আলোচনা করতে চলেছি মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচির দ্বিতীয় অধ্যায় সুবোধ ঘোষ রচিত বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর নিয়ে। এই পোস্টে গল্পটির সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে, যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে। তোমারা যারা এবছর দশম শ্রেণীতে পড়ছো এবং 2026 সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়লে নিশ্চয়ই অনেক ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। 

মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর 

প্রশ্ন: বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার হয়েছিল
ক) আট টাকা দশ আনা
খ) আট টাকা আট আনা
গ) দশ টাকা চার আনা
ঘ) দশ টাকা দশ আনা।
উত্তর: আট টাকা দশ আনা

প্রশ্ন: সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান- 
ক) একদিন
খ) দুদিন
গ) চারদিন
ঘ) পাঁচদিন।
উত্তর: একদিন

প্রশ্ন: পুলিশ সেজে হরিদা দাঁড়িয়েছিলেন।
ক) জগদীশবাবুর বাড়িতে
খ) চকের বাসস্ট্যান্ডে
গ) দয়ালবাবুর লিচু বাগানে
ঘ) চায়ের দোকানে।
উত্তর: দয়ালবাবুর লিচু বাগানে

প্রশ্ন: জগদীশবাবু বিরাগীকে প্রণামী দিতে চেয়েছিলেন
ক) এক হাজার টাকা
খ) পাঁচশো টাকা
গ) একশো এক টাকা
ঘ) একশো টাকা।
উত্তর: একশো এক টাকা।

প্রশ্ন: "আশ্চর্য হয়েছি, একটু ভয়ও পেয়েছি।" হরিদার কোন্ রূপ দেখে বক্তার এমন দশা হয়েছিল?- 
ক) কাপালিক রূপ দেখে
খ) বাইজির রূপ দেখে
গ) পুলিশের সাজ দেখে
ঘ) বিরাগী রূপ দেখে
উত্তর: বিরাগী রূপ দেখে

প্রশ্ন: হরিদা পেশায় ছিলেন একজন
ক) কনেস্টেবল
খ) বহুরূপী
গ) সন্ন্যাসী
ঘ) পূজারি ব্রাক্ষ্মণ
উত্তর: বহুরূপী

প্রশ্ন: ‘বহুরূপী’ গল্পের লেখক হলেন-
ক. সুবোধ ঘোষ
খ. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
গ. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ঘ. বিমল মিত্র
উত্তর: সুবােধ ঘােষ

প্রশ্ন: জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী ছিলেন।
ক) তিনদিন
খ) চারদিন
গ) পাঁচদিন
ঘ) সাতদিন
উত্তর: সাতদিন

প্রশ্ন: জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর বয়স 
ক) একশো বছরের বেশি 
খ) হাজার বছরের বেশি 
গ) হাজার বছর
ঘ) একশো বছর 
উত্তর: হাজার বছরের বেশি 

প্রশ্ন: হরিদার ঘরে আড্ডা দিত –
ক) ছ জন 
খ) তিন জন 
গ) চার জন 
ঘ) পাঁচ জন
উত্তর: চার জন 

প্রশ্ন: “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস”—‘ভয়ানক দুর্লভ জিনিসটি হল—
ক) সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ পাওয়া।
খ) সন্ন্যাসীর দেখা পাওয়া
গ) সন্ন্যাসীর কমঙুল পাওয়া 
ঘ) সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলাে পাওয়া
উত্তর: সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলাে পাওয়া

প্রশ্ন: সন্ন্যাসীকে খড়ম দিয়েছিলেন –
ক) ভবতােষ
খ) অনাদি
গ) জগদীশবাবু
ঘ) হরিদা
উত্তর: জগদীশবাবু

প্রশ্ন: প্রায় নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছিল –
ক) একটি পাগল
খ) একজন বাইজি
গ) একজন কাপালিক
ঘ) একজন সন্ন্যাসী
উত্তর: একজন বাইজি

প্রশ্ন: জগদীশবাবু কেমন স্বভাবের মানুষ ছিলেন ?
ক) বিকৃত
খ) কৃপণ
গ) কপট
ঘ) উদার
উত্তর: কৃপণ

প্রশ্ন: বিরাগী আসলে ছিলেন –
ক) পাগল
খ) সন্ন্যাসী
গ) জগদীশবাবু
ঘ) হরিদা
উত্তর: হরিদা

প্রশ্ন: বিরাগীরূপী হরিদার গায়ে ছিল কেবলমাত্র একটি-
ক) উত্তরীয়
খ) জামা
গ) পাঞ্জাবি
ঘ) শাল
উত্তর: উত্তরীয়

মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর 

প্রশ্ন: জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য কত টাকা বিরাগীকে দিতে চেয়েছিলেন ?  
উত্তর: জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য বিরাগীকে একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন ।

প্রশ্ন: "হরিদার জীবন এইরকম বহুরূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে ।" — কী রকম খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ?
উত্তর: বিচিত্র ছদ্মবেশে বহুরূপী সেজে খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ।

প্রশ্ন: "সপ্তাহে বড়োজোর একটা দিন বহুরূপী সেজে পথে বের হন হরিদা" — 'বহুরূপী' কাকে বলে ?
উত্তর: 'বহুরুপী' হল একধরনের লোকশিল্পী যারা বিবিধ বেশে সজ্জিত হয়ে নানা রূপ ধারণ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জন করে ।

প্রশ্ন: "আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো?”- বক্তা একথা কাকে বলেছিলেন?
উত্তর: বক্তা ওরফে হরিদা বিরাগী বেশধারণ করে জগদীশবাবুকে একথা বলেছিলেন।

প্রশ্ন: "মাস্টারমশাই একটুও রাগ করেননি। বরং একটু তারিফই করলেন..." - 'তারিফ' করার কারণ কী?
উত্তর: মাস্টারমশাই নকল-পুলিশ হরিদার সাজসজ্জার তারিফ করেছিলেন।

প্রশ্ন: "কিন্তু ওই ধরনের কাজ হরিদার জীবনের পছন্দই নয়।"- কী ধরনের কাজ হরিদার অপছন্দ?
উত্তর: হরিদার অপছন্দের কাজ বলতে বোঝানো হয়েছে কোনো প্রকার অফিসের চাকরি অথবা দোকানে বিক্রেতার দায়িত্ব পালন। এই ধরনের নিয়মিত ও একঘেয়ে পেশাগত কাজ তিনি পছন্দ করতেন না।

প্রশ্ন: হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম- ‘আমরা’ বলতে এখানে কাদের বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এই উক্তিটি সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘আমরা’ বলতে মূলত গল্পকার নিজে, ও তাঁর বন্ধু ভবতোষ, অনাদি এবং তাঁদের মতো আরও কিছু ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন: বাঃ, এ তো বেশ মজার ব্যাপার।’- মজার ব্যাপারটি কী?
উত্তর: এখানে মজার ব্যাপারটি হল যে, সাধারণভাবে একজন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো পাওয়া দুষ্কর হলেও, কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তা তাঁর পায়ের কাছে ধরতেই তিনি পা এগিয়ে দেন। এই সুযোগে জগদীশবাবু চতুরভাবে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন।

প্রশ্ন: ‘গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা।’- হরিদার গম্ভীর হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: হরিদা গম্ভীর হয়ে যান কারণ তিনি জানতে পারেন, যে সন্ন্যাসী সর্বত্যাগের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, তিনি একজোড়া সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম ও একশো এক টাকা পেয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন। এ কথা শুনে হরিদার বিশ্বাস টলে যায়। তিনি গম্ভীর হয়ে যান।

প্রশ্ন: চমকে উঠলেন জগদীশবাবু।’- জগদীশবাবুর চমকে ওঠার কারণ কী?
উত্তর: জগদীশবাবু চমকে ওঠেন কারণ তিনি একজন ব্যক্তিকে দেখতে পান যিনি ছিলেন আদুর শরীরের, গায়ে সাদা উত্তরীয় ও ছোটো সাদা থান পরিহিত, মাথায় সাদা চুল এবং পায়ে ধুলো মাখা। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে ঐ ব্যক্তিকে দেখে তিনি হঠাৎ করে চমকে ওঠেন।

প্রশ্ন: ‘কিন্তু সেটাই যে হরিদার জীবনের পেশা'– হরিদার পেশা কী ছিল ?
উত্তর:- সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে, হরিদার প্রধান পেশা ছিল বিভিন্ন বেশে, অর্থাৎ বহুরূপী সেজে রোজগার করা। তিনি নানান রূপ ধারণ করে সামান্য অর্থ উপার্জন করতেন, যার দ্বারা ভাতের হাঁড়ির দাবি মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন । এটাই তার পেশা ।

প্রশ্ন: জগদীশবাবু কীভাবে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন ?
উত্তর:- ‘বহুরূপী’ গল্প অনুযায়ী, জগদীশবাবু একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি এক জোড়া কাঠের খড়মের উপর সোনার বোল লাগিয়ে তা সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেন। নতুন খড়ম পরার জন্য সন্ন্যাসী বাধ্য হয়ে পা বাড়িয়ে দেন এবং সেই মুহূর্তে জগদীশবাবু পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন।

মাধ্যমিক বাংলা বহুরূপী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর 

প্রশ্ন: হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন? তিনি কীভাবে মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন?
উত্তর: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পটির মূল চরিত্র হরিদা পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলেন।
স্কুলের চারজন ছাত্র লিচুবাগানে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করলে হরিদা নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের আটক করেন। ছাত্ররা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে বিদ্যালয়ের মাস্টারমশাই ঘটনাস্থলে এসে হরিদাকে সত্যিকারের পুলিশ ভেবে ছেলেদের মুক্তির জন্য অনুরোধ করেন এবং আট আনা উপরি দিয়ে ছাত্রদের মুক্ত করেন ।
এই ঘটনার মাধ্যমে হরিদা তাঁর ছদ্মবেশ ধারণের অসাধারণ দক্ষতা ও অভিনয় প্রতিভার পরিচয় দেন, যা একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকেও বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়।

প্রশ্ন: “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।” কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে? তা দুর্লভ কেন?
উত্তর: সুবোধ ঘোষের রচিত 'বহুরূপী' গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলোকে 'দুর্লভ জিনিস' বলা হয়েছে। সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরেরও বেশি, এবং তিনি হিমালয়ের এক গুহায় একটি হরীতকী ফল খেয়ে জীবনধারণ করে আসছেন। এ কারণে তাঁর মতো একজন সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো অত্যন্ত দুর্লভ এবং মূল্যবান জিনিস। তাঁর পায়ের ধুলো পাওয়া আদৌ সহজলভ্য বস্তু ছিল না কিন্তু জগদীশবাবু এই দুর্লভ ধূলিকণা সংগ্রহ করেন তখন, যখন তিনি সন্ন্যাসীর জন্য সোনার বোল লাগানো নতুন খড়ম পরিয়ে দিচ্ছিলেন। 

প্রশ্ন: “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।” ‘ঢং’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? কীসে ঢং নষ্ট হয়ে যাবে?
উত্তর: পেশাগত জীবনে বহুরূপী হরিদাকে তার বাহ্যিক রূপের পাশাপাশি কথা বলা-আচরণ ও স্বভাবের ঢং-ও পালটাতে হত। উল্লিখিত অংশে এমনই একটি রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে, যেখানে হরিদা একজন বিরাগী সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ ধারণ করেন এবং সেই অনুযায়ী তাকে আচরণ করেন। এখানে সেই ঢং-এর কথা বলা হয়েছে। 
হরিদা জগদীশবাবুর সামনে একজন সংসারত্যাগী, বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে গিয়েছিল যাঁর পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর প্রতি বিরাগ জন্মেছে। এখন, তখন তাঁকে এমন একজন চরিত্রে অভিনয় করতে হয় যিনি পার্থিব সব বস্তু ও মোহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কিন্তু যদি এই সন্ন্যাসী স্বল্প অর্থ (যেমন একশো টাকা) গ্রহণে আগ্রহ দেখান, তাহলে বিরাগীর আচরণের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের কোনো সাদৃশ্য থাকবে না। তাঁর কথাবার্তা ও আচার-আচরণের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা যাবে। ফলে তাঁর অভিনয় বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। একেই ঢং নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। 
আসলে এই আচরণের মধ্য দিয়েই বহুরূপী হরিদার প্রকৃত স্বরূপটি প্রকাশ পেয়েছিল।

প্রশ্ন: জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করো।
উত্তর: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবু একটি পার্শ্বচরিত্র। তিনি একজন শিক্ষিত, মার্জিত ও ভদ্র স্বভাবের ব্যক্তি। তাঁর চেহারা শান্ত ও সৌম্য, আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও আচরণে কৃপণ। তাঁর জীবনের অন্যতম দুর্বলতা হল অন্ধ ভক্তি। সুখ শান্তির আশায় তিনি সাধু ও সন্ন্যাসীদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন। এই প্রবণতার সুযোগ নিয়ে বহুরূপী হরিদা তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করেন।
হরিদা শুধু তাঁর পেশাগত জীবনেই বহুরূপী নন, তার ব্যক্তিগত জীবনেও বৈচিত্র্যময়। জগদীশবাবুর বাড়িতে তিনি এক বিরাগীর ছদ্মবেশে আবির্ভূত হন। এক জ্যোৎস্নাময় সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দায় বসে থাকার সময় তিনি প্রথম হরিদাকে দেখেন। হরিদার বেশভূষা ছিল ভিন্নধর্মী—তিনি জটাধারী, হাতে কমণ্ডলু, চিমটে, মৃগচর্মের আসনসহ গৈরিক বসন পরিহিত কোন সন্ন্যাসী নন, তিনি একজন বিরাগী, যার আদুড় গা এবং তার উপর একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় এবং কাঁধে একটি ঝোলা। ঝোলার ভিতরে ছিল একটি গীতা। তাঁর উপস্থিতি এতটাই ব্যতিক্রমী ছিল যে জগদীশবাবুর মনে হয় তিনি যেন এই জগতের সীমার বাইরে থেকে এসেছেন।
এই ছদ্মবেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে প্রবেশ করলেও তিনি প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। যদিও তাঁর অভাব ছিল, তবুও তিনি শিল্পের মর্যাদা ও শিল্পীর সম্মানের কথা ভেবে প্রণামী গ্রহণ করেননি। কথক ও তাঁর বন্ধুরা এই সিদ্ধান্তের জন্য হরিদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে, হরিদা নির্লিপ্তভাবে শিল্প ও শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধার কথা উল্লেখ করেন।

প্রশ্ন: “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।” হরিদা কী ভুল করেছিলেন? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী?
উত্তর: ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা অর্থ উপার্জনের জন্য বিরাগীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর বাড়িতে যান। তাঁর পোশাক-আশাক ও কথাবার্তার ভঙ্গিমায় মুগ্ধ হয়ে জগদীশবাবু তাঁকে একজন প্রকৃত সন্ন্যাসী বলে মনে করেন এবং অতিথি সেবা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিদায়ের সময়, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ জগদীশবাবু হরিদাকে একশো টাকা প্রণামী দিতে চান। কিন্তু হরিদা তা উদাসীনভাবে প্রত্যাখ্যান করে চলে যান। তিনি বলেন, “আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনিই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি।”
এই বক্তব্যে হরিদার অন্তরের সন্ন্যাসবোধ ও আত্মিক নিষ্কামতাকে প্রতিফলিত করা হয়েছে। তিনি এতটাই নিজের অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে প্রণামী গ্রহণ করলে চরিত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে মনে করেন। গল্পের কথক এই আচরণকে হরিদার ‘ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন।
অভাবী হরিদা ভাগ্য তাঁর পাশে দাঁড়াতে চাইলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এর ফলে কথকের মতে, হরিদা নিজের দারিদ্র্যকে চিরস্থায়ী করে তুলেছেন। কথকের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে তাঁর হাঁড়িতে শুধু জল ফুটবে, তাতে চালের জোগান থাকবে না। এবং কথকের মনে হয় অদৃষ্টও হয়তো কখনও এই 'ভুল' সিদ্ধান্তকে ক্ষমা করবে না।

প্রশ্ন: “অথচ আপনি একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন?” কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কীভাবে ‘খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো’ ব্যবহার করেছিলেন সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: সুবোধ ঘোষের ‘বহুরুপি’ গল্পে বর্ণিত উক্ত উদ্ধৃতিটিতে হরিদার কথা বলা হয়েছে। তিনি একদম খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো বেশ ধারণ করে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন। হরিদার গায়ে ছিল ধবধবে সাদা উত্তরীয় ও ছোট বহরের একটি সাদা থান, যা তাঁকে প্রকৃত সন্ন্যাসীর মতোই দেখাচ্ছিল।
সন্ন্যাসীর বেশে আসা হরিদা যখন জগদীশবাবুর বাড়িতে পৌঁছান, জগদীশবাবু তাঁকে যথোচিত মর্যাদা দিয়ে অভ্যর্থনা জানান এবং সেবাযত্নে নিযুক্ত হন। তিনি বিরাগীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সন্ন্যাসী কিছু উপদেশ দিয়ে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। সেই মুহূর্তে জগদীশবাবু তাঁকে এক মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন এবং একটি থলি আনেন, যার মধ্যে একশো এক টাকার নোট ছিল।
তিনি সেই থলিটি সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে রেখে বিনীতভাবে অনুরোধ করেন, “এই প্রণামী, এই সামান্য একশো এক টাকা গ্রহণ করে আমাকে শান্তি দান করুন বিরাগীজি।” তবে সন্ন্যাসী সেই থলির দিকে না তাকিয়েই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যান। এই ঘটনাটি একজন প্রকৃত বিরাগী সন্ন্যাসী যেমন অর্থসম্পদের প্রতি আসক্ত নন ঠিক তেমনি সন্ন্যাসীর মান রক্ষার্থে সেই টাকাকে এড়িয়ে চলে আসেন। 

কথোপকথনে যোগ দিন