সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা কাকে বলে ?

সাধু ভাষা কাকে বলে

যে ভাষারীতিতে অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের অভিধানের উপর নির্ভর করে সংস্কৃত (তৎসম) শব্দবহুল ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয় এবং যার শব্দগুলি সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধ তাকে সাধু ভাষা বলে । যেমন: তোমাকে দেখিয়া আমি খুবই খুশি হইলাম।

সাধু ভাষার বৈশিষ্ট্য

১) সাধু ভাষার তৎসম শব্দের প্রয়োগ বেশী হয়। যেমন চন্দ্র, গগন
২) বাক্যের গঠন নির্দিষ্ট রীতি মেনেই হয়। যেমন- রিষিতা ফুল তোলে।
৩) সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহারের প্রাবল্য দেখা যায়। যেমন- কনকবলয়, বিধুমুখী
৪) ক্রিয়াপদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- খেলিয়া, খেলিতেছি, খেলিয়াছিলাম।
৫) সর্বনামের পূর্ণরূপ ব্যবহার দেখা যায়। যেমন- তাহাকে, তাহারা, তাহাদের
৬) এই ভাষারীতিতে কর্তৃক, নিমিত্ত, নিকট প্রভৃতি অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়।
৭) যৌগিক ক্রিয়াপদ অধিক প্রয়োগ হয়। যেমন- শ্রবণ করা, ভ্রমণ করা।
৮) এই রীতিতে শব্দালংকার ও অর্থালংকারের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

চলিত ভাষা কাকে বলে

যে ভাষায় ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদ সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবহৃত হয় এবং সমাস যুক্ত পদ প্রায় নেই বললে চলে তাকে চলিত ভাষা বলে। যেমন: তোমাকে দেখে আমি খুবই খুশি হলাম।

চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য

১) চলিত ভাষায় তদ্ভব, অর্ধ তৎসম, দেশি ও বিদেশি শব্দ বেশি লক্ষ্য করা যায়। যেমন- তদ্ভব- হাত, অর্ধ তৎসম কেষ্ট, দেশি- ডিঙি, বিদেশি- স্কুল।
২) এই রীতিতে সর্বনামের সংক্ষিপ্ত রূপের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন-তা, যা, তার
৩) প্রচলিত প্রবাদ প্রবচন চলিত ভাষায় সহজেই ব্যবহৃত হয় ও খাপ খেয়ে যায়। যেমন - নুন আনতে পান্তা ফুরায়, একাই একশো।
৪) বাক্যের পদক্রম বা বিন্যাস অনেক নমনীয় বা শিথিল। যেমন- সবাই গান শুনছে। গান শুনছে সবাই।
৫) দিয়ে, হতে ও সঙ্গে প্রভৃতি অনুসর্গ চলিত ভাষায় দেখা যায়।
৬) ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ লক্ষ্য করা যায়। যেমন- খেলছি, খেলেছি, খেলেছিলাম

সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার পার্থক্য

সাধু ভাষা চলিত ভাষা
সাধুভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী। চলিত ভাষা স্বাভাবিক, সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য ।
তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়। তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার প্রায়ই হয় না বললেই চলে।
ক্রিয়া পদ, অব্যয় পদ গুলি সাধু ভাষায় সাধারণত দীর্ঘ হয়ে থাকে। চলিত ক্রিয়া পদ, অব্যয় পদ গুলি সাধারণত সংক্ষিপ্ত বা ছোট হয়ে থাকে।
সাধু ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নিয়ম মেনে চলে বলে। চলিত ভাষা ব্যাকরণের সুনির্ধারিত নিয়ম মেনে চলে না বলে।
এই ভাষা অপরিবর্তনীয় ইহা পরিবর্তনশীল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন