ধ্বনি কাকে বলে? কয় প্রকার ও কি কি

বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল ধ্বনি। প্রায় সব পরীক্ষায় ধ্বনি কাকে বলে? ধ্বনি কত প্রকার এই প্রশ্নটি এসে থাকে যা এখানে আলোচনা করা হল।
ধ্বনি কাকে বলে?

ধ্বনি কাকে বলে

ধ্বনি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল আওয়াজ। মানুষের মুখনিঃসৃত নিয়ন্ত্রিত ক্ষুদ্রতম আওয়াজই হলো ধ্বনি অর্থাৎ কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম একক হলো ধ্বনি। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাকযন্ত্রের সাহায্যে যে অর্থ যুক্ত শব্দ উচ্চারণ করা হয় তাকেই ধ্বনি বলে। যেমন- অ, আ, ক্, খ্, ইত্যাদি।

ধ্বনির বৈশিষ্ট্য

১) ধ্বনি হলো ভাষার মূল উপাদান 
২) ধ্বনির নিজেস্ব কোন অর্থ নেই । কয়েকটি ধ্বনি মিলিত হয়ে অর্থবহ শব্দ সৃষ্টি করে।
৩) ধ্বনি গঠনে বিভিন্ন বাক প্রত্যঙ্গ অন্তত গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪) ধ্বনি উৎপাদনে ফুসফুসের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও সরাসরি ফুসফুস ধ্বনি থেকে উৎপন্ন হয় না।

ধ্বনির প্রকারভেদ

বাংলা ভাষায় ধ্বনিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যথাঃ ১) স্বরধ্বনি ২) ব্যঞ্জনধ্বনি

স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ু মুখবিবরের ভেতরে কোথাও বাধা পায় না এবং যা অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই সম্পর্ণভাবে উচ্চারিত হয় তাকে স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনির সংখ্যা মোট ১১টি যথাঃ অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ,ঐ, ও, ঔ

স্বরধ্বনি এর প্রকারভেদ

স্বরধ্বনিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথাঃ মৌলিক স্বরধ্বনি ও যৌগিক স্বরধ্বনি

মৌলিক স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি গুলিকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাদেরকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলা হয়। যেমনঃ অ, আ, ই, উ,এ, ও, এ্যা

যৌগিক স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি গুলিকে বিশ্লেষণ করা যায় সেই স্বরধ্বনিকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যেমনঃ ঐ,ঔ

উচ্চারণ সময়ের ব্যাপ্তি অনুসারে স্বরধ্বনিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা:- হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর

হ্রস্বস্বর: যে স্বরধ্বনি গুলি উচ্চারণ করতে আমাদের শ্বাস বায়ুর ব্যবহার কম হয় ও উচ্চারণে সময় কম লাগে, সেই স্বরধ্বনিকে হ্রস্বস্বর বলা হয়। উদাহরণ - অ,ই,উ,ঋ

দীর্ঘস্বর: যে সকল স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে আমাদের শ্বাস বায়ুর ব্যবহার বেশি হয় ও উচ্চারণে বেশি সময় লাগে, সেই স্বরধ্বনিকে দীর্ঘস্বর বলা হয়। উদাহরণ - আ,ঈ,ঊ,এ,ঐ,ও,ঔ

ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে

বাংলা ভাষায় যে সমস্ত ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে নির্গত বায়ু মুখবিবরের ভেতরে কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং যা স্বরধ্বনির সাহায্য নিয়ে উচ্চারিত হয় তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

ব্যঞ্জনধ্বনিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা:- ১) উচ্চারণ স্থান ২) উচ্চারণ রীত ৩) ঘোষ ও অঘোষ

উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ

উচ্চারণের অবস্থান অনুযায়ী ধ্বনিকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।

সম্মুখ স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা সামনের দিকে এগিয়ে আসে তাকে সম্মুখ স্বরধ্বনি বলে । এই জাতীয় স্বরধ্বনি গুলি হলো- ই, এ এবং অ্যা ।

পশ্চাদ স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছিনের দিকে পিছিয়ে যায় তাকে পশ্চাদ স্বরধ্বনি বলে । এই জাতীয় স্বরধ্বনি গুলি হলো- উ, ও এবং অ।

কুঞ্চিত স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটি উন্মুক্ত হয় তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন: অ, ও এবং উ।

সংবৃত স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি গুলি উচ্চারণ করার সময় মুখদ্বার সবচেয়ে কম প্রসারিত ও উন্মুক্ত হয়, তাকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন: ই, উ।

বিবৃত স্বরধ্বনি: যে স্বরধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় মুখদ্বার সব চেয়ে বেশি প্রসারিত ও উন্মুক্ত হয় তাদেরকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন: আ।

কন্ঠ ধ্বনি: যে ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় কন্ঠের ব্যবহার হয় তাদেরকে কন্ঠ ধ্বনি বলে। যেমন: অ, আ।

তালব্যধ্বনি: যে ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় তালুর ব্যবহার হয় তাদেরকে তালব্যধ্বনি ধ্বনি বলে। যেমন - ই, ঈ।

ওষ্ঠ ধ্বনি: যে ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠের ব্যবহার হয় তাদেরকে ওষ্ঠ ধ্বনি বলে। যেমন:- উ, ঊ

কণ্ঠ্য তালব্য ধ্বনি: যে ধ্বনি গুলি কণ্ঠ্য ও তালুর সাহায্যে উচ্চারিত হয় তাকে কণ্ঠ্য তালব্য ধ্বনি বলে। যেমন- এ, ঐ।

কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি: যে ধ্বনি গুলি কণ্ঠ্য ও ওষ্ঠের সাহায্যে উচ্চারিত হয় তাকে কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি বলে। যেমন- ও, ঔ।

মূর্ধন্য ধ্বনি: যে ধ্বনি গুলি মূর্ধার সাহায্যে উচ্চারিত হয় তাকে কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি বলে। যেমন - ঋ।

দন্ত্য ধ্বনি: যে ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় জিহ্বাশিখর বা জিহ্বাপ্রান্ত ও উপরের দাঁত এর মধ্যে শ্বাসবায়ুকে বাধা দেয় তাদেরকে দন্ত্য ধ্বনি বলে।

কথোপকথনে যোগ দিন