জ্ঞানচক্ষু (আশাপূর্ণা দেবী) গল্পের প্রশ্ন উত্তর - মাধ্যমিক বাংলা 2026
মাধ্যমিক বাংলা প্রথম অধ্যায় জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর দশম শ্রেণীর বাংলা জ্ঞানচক্ষু গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর গুলি দেওয়া হলো
মাধ্যমিক বাংলা প্রথম অধ্যায় জ্ঞানচক্ষু
প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, আজকের আমরা আলোচনা করতে চলেছি মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যসূচির প্রথম অধ্যায় আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পটি নিয়ে, গল্পটি একজন কিশোরের সাহিত্যজগতে প্রবেশ, আত্মসম্মানবোধের গঠন এবং বাস্তব জীবনের উপলব্ধিকে কেন্দ্র করে রচিত।
এই পোস্টে গল্পটির সংক্ষিপ্ত সারাংশ, নামকরণের বিশ্লেষণ, এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হয়েছে, যা তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে। তোমারা যারা এবছর দশম শ্রেণীতে পড়ছো এবং 2026 সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়লে নিশ্চয়ই অনেক ভালো রেজাল্ট করতে পারবে।
জ্ঞানচক্ষু গল্পের উৎস ও পটভূমি
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পটি বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লিখিত 'কুমকুম' গল্পসংকলনের অন্তর্ভুক্ত। আশাপূর্ণা দেবী বাংলা সাহিত্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখিকা, যিনি তাঁর সাহিত্যকর্মে নারীজীবন, সামাজিক বাস্তবতা এবং শিশুদের মানসিক বিকাশকে কেন্দ্র করে নানা দিক তুলে ধরেছেন। 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পটি মূলত শিশুমনের স্বাভাবিক কৌতূহল, সাহিত্যবোধ এবং আত্মমর্যাদার অনুভূতিকে কেন্দ্র করে গঠিত, যা পাঠকের কাছে একটি স্পষ্ট ও ভাবনাপ্রসূত বার্তা পৌঁছে দেয়।
জ্ঞানচক্ষু গল্পের সারাংশ
'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের মূল চরিত্র তপনের শৈশবকাল থেকেই ধারণা ছিল যে, লেখকরা সাধারণ মানুষের থেকে ভিন্ন কোনো জগতের মানুষ। তার বিশ্বাস ছিল, লেখকরা সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করেন না। তবে তার এই ধারণার পরিবর্তন ঘটে তখন, যখন সে জানতে পারে যে তার সদ্য বিবাহিত ছোটোমাসির স্বামী একজন পেশাদার লেখক।
এই সত্যটি জানার পর তপন অবাক হয়ে লক্ষ্য করে যে লেখক হওয়ার সত্ত্বেও ছোটোমেসো একেবারে সাধারণ জীবনযাপন করেন। তিনি সাধারণ মানুষের মতো ঘুমান, স্নান করেন এবং দাড়িও কামান। মামাবাড়িতে এসে তপনও লেখালেখি আরম্ভ করে এবং সে নিজে একটি গল্প লিখে। ছোটোমাসি সেই গল্পটি জোর করে ছোটোমেসোর হাতে তুলে দেন। এবং তিনি গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ নামক একটি পত্রিকায় প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
তপন আগ্রহ ও উৎসাহিত হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে তার লেখা গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার জন্য। কিন্তু গল্পটি প্রকাশ হতে দেরি হয়। একদিন, হঠাৎ ছোটোমাসি ও ছোটোমেসো একটি পত্রিকা হাতে নিয়ে তপনের বাড়িতে আসেন। সেই পত্রিকায় দেখা যায়, তপনের গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে।
তবে গল্পটি পড়ার পর তপন হতাশ হয়। সে লক্ষ্য করে যে, ছোটোমেসো সংশোধনের নামে গল্পটির মৌলিক রূপই সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এর ফলে তপনের নিজের লেখা গল্প তার কাছে অপরিচিত মনে হয়। এই অভিজ্ঞতায় সে দুঃখ পায় এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে ভবিষ্যতে সে নিজেই তার লেখা পত্রিকায় জমা দেবে, যাতে তার সৃষ্টির কৃতিত্ব অন্য কেউ না নিতে পারে।
এই উপলব্ধির মাধ্যমেই তপনের "জ্ঞানচক্ষুর” উন্মেষ ঘটে, এবং সে নিজের লেখালেখির প্রতি অধিক সচেতন ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে।
জ্ঞানচক্ষু নামকরণের তাৎপর্য
গল্পের নাম "জ্ঞানচক্ষু” (অন্তর্দৃষ্টি) একটি যথার্থ ও তাৎপর্যময় নামকরণ, যা গল্পের মূল বার্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। শুরুতে তপন মনে করত লেখকরা সাধারণ মানুষের থেকে ভিন্ন কোনো জীব। কিন্তু ধীরে ধীরে সে উপলব্ধি করে যে, লেখকরাও সাধারণ মানুষের মতোই, তাদের ভাবনা, আবেগ ও অনুভূতিগুলি অন্য সাধারণ মানুষের মতোই। কিন্তু সে আসল শিক্ষা পায় তখন, যখন তার নিজের লেখা গল্প প্রকাশিত হলেও সেটিকে নিজের বলে মনে হয় না। তখন সে উপলব্ধি করে একজন লেখকের স্বত্বাধিকার ও আত্মমর্যাদার গুরুত্ব কতটা। এই অন্তর্দৃষ্টিই তার ‘জ্ঞানচক্ষু’র উন্মোচন ঘটায়। সুতরাং, গল্পের শিরোনাম শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়, বরং এটি গল্পের বিষয়বস্তুর এক গভীর ব্যঞ্জনা বহন করে।
মাধ্যমিক বাংলা জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: তপনের ছোটোমাসির বিয়ে হয়ে গেল-
ক) কদিন আগে
খ) কিছুদিন আগে
গ) দিন কয়েক আগে
ঘ) কয়েকটি দিন আগে
উত্তর: ক) কদিন আগে
প্রশ্ন: তপনের মেসোমশাই কোন্ পত্রিকার সম্পাদককে চিনতেন?-
ক) 'শুকতারা'
খ) 'আনন্দমেলা'
গ) 'সন্ধ্যাতারা'
ঘ) 'দেশ'।
উত্তর: গ) 'সন্ধ্যাতারা’
প্রশ্ন: নতুন মেসোমশাই হলেন তপনের-
ক) বড়ো মেসোমশাই
খ) ছোটো মেসোমশাই
গ) মেজো মেসোমশাই
ঘ) সেজো মেসোমশাই
উত্তর: খ) ছোটো মেসোমশাই
প্রশ্ন: জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচয়িতা হলেন -
ক) মহাশ্বেতা দেবী
খ) অনিলা দেবী
গ) আশাপূর্ণা দেবী
ঘ) লীলা মজুমদার
উত্তর: গ) আশাপূর্ণা দেবী
প্রশ্ন: তপনের মেসোমশাই কোন্ পত্রিকায় তপনের লেখা ছাপানোর কথা বলেছিলেন?
ক) ধ্রুবতারা
খ) শুকতারা
গ) সন্ধ্যাতারা
ঘ) রংমশাল।
উত্তর: গ) 'সন্ধ্যাতারা’
প্রশ্ন: কথাটা শুনে তপনের চোখ হয়ে গেল!
ক) স্থির
খ) গোল
গ) বিস্ফারিত
ঘ) মার্বেল
উত্তর: ঘ) মার্বেল
প্রশ্ন: জ্ঞানচক্ষু গল্পের উৎস হলো-
ক) মনের মুখ
খ) চশমা পালটে যায়
গ) কুমকুম
ঘ) সুবর্ণলতা
উত্তর: গ) কুমকুম
প্রশ্ন: নতুন মেসোকে দেখে তপনের কী খুলে গেল?
ক) বুদ্ধি
খ) প্রতিভা
গ) জ্ঞান
ঘ) জ্ঞানচক্ষু
উত্তর: ঘ) জ্ঞানচক্ষু
প্রশ্ন: ছোটোমাসি তপনের থেকে কত বছরের বড়ো?
ক) বছর পাঁচেকের
খ) বছর আষ্টেকের
গ) বছর দশেকের
ঘ) বছর বারোর
উত্তর: বছর আষ্টেকের
প্রশ্ন: "তার মানে- তপনের নতুন মেসোমশাই একজন লেখক।"-কেমন লেখক?
ক) নামকরা লেখক
খ) সত্যিকারের লেখক
গ) প্রকৃত লেখক
ঘ) উদীয়মান লেখক
উত্তর: গ) প্রকৃত লেখক
প্রশ্ন: মেসো যখন শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন-তখন তাঁর-
ক) পুজোর ছুটি চলছিল
খ) বড়ো দিনের ছুটি চলছিল
গ) গরমের ছুটি চলছিল
ঘ) তিনি ছুটি নিয়েছিলেন
উত্তর: গ) গরমের ছুটি চলছিল
প্রশ্ন: "আর সেই সুযোগই দেখতে পাচ্ছে তপন।"- তপনের যে সুযোগের কথা বলা হয়েছে-
ক) একজন লেখককে দেখবার সুযোগ
খ) নিজে লেখক হওয়ার সুযোগ
গ) মামাবাড়িতে থাকার সুযোগ
ঘ) নতুন মেসোর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ
উত্তর: ক) একজন লেখককে দেখবার সুযোগ
প্রশ্ন: পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়া তপনের গল্পটির নাম
ক) ইস্কুলের গল্প
খ) একদিন
গ) প্রথম দিন
ঘ) রাজার কথা।
উত্তর: গ) প্রথম দিন
প্রশ্ন: তপন কী লিখেছিল?
ক) কবিতা
খ) গল্প
গ) প্রবন্ধ
ঘ) বিয়েবাড়ির অভিজ্ঞতা
উত্তর: খ) গল্প
প্রশ্ন: আশাপূর্ণা দেবী জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পান-
ক) ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: ক) ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে
প্রশ্ন: নতুন মেসো তপনকে তার লেখা গল্পের ব্যাপারে বলেন-
ক) দারুণ হয়েছে
খ) ভালো হয়েছে
গ) সুন্দর হয়েছে
ঘ) দিব্যি হয়েছে
উত্তর: ঘ) দিব্যি হয়েছে
প্রশ্ন: "এ দেশের কিছু হবে না"-উক্তিটি কার?
(ক) তপনের মোসোমশাইয়ের
(খ) তপনের ছোটো মামার
(গ) তপনের মেজোকাকুর
ঘ) তপনের বাবার
উত্তর: (ক) তপনের মোসোমশাইয়ের
প্রশ্ন: তপন তার প্রথম গল্পটি লিখেছিল, যে সময়-
ক) সকালবেলা
খ) রাত্রিবেলা
গ) বিকেলবেলা
ঘ) দুপুরবেলা
উত্তর: ঘ) দুপুরবেলা
প্রশ্ন: তপন তার ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামাবাড়িতে আসার সময় তার 'হোমটাঙ্কের খাতা' এনেছিল কার ইচ্ছায়?
ক) বাবার
খ) নিজের
গ) কাকার
ঘ) মায়ের
উত্তর: ঘ) মায়ের
প্রশ্ন: "ওমা এ তো বেশ লিখেছিস রে?"-তপনের গল্প সম্পর্কে এই উক্তিটি ছিল-
ক) তপনের মেসোমশাইয়ের
খ) তপনের মামার
গ) তপনের মায়ের
ঘ) তপনের ছোটোমাসির
উত্তর: ঘ) তপনের ছোটোমাসির
প্রশ্ন: বাড়ির ঠাট্টা-তামাশার আবহাওয়ার মধ্যেই তপন গল্প লিখেছিল-
ক) একটি
খ) দুটি
গ) দু-তিনটে
ঘ) তিনটে-চারটে
উত্তর: গ) দু-তিনটে
প্রশ্ন: 'তুমি বাপু ওর গল্পটা ছাপিয়ে দিও'-বলেছেন
ক) তপনের ছোটোমামা
খ) তপনের ছোটোমাসি
গ) তপনের মেজোকাকু
ঘ) তপনের বাবা
উত্তর: খ) তপনের ছোটোমাসি
প্রশ্ন: "তা নইলে ফট করে একটা লিখল, আর ছাপা হলো।"-তপনের লেখার এই মন্তব্যটি করেছে-
ক) তপনের মা
খ) তপনের মামা
গ) তপনের মাসি
ঘ) তপনের বাবা
উত্তর: ঘ) তপনের বাবা
জ্ঞানচক্ষু গল্পের অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পটি কার লেখা? এর উৎস উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি খ্যাতনামা বাংলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর রচনা। এই গল্পটি তাঁর শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গল্পসংকলন ‘কুমকুম’-এ অন্তর্ভুক্ত। এটি বাংলা সাহিত্যে শিশুতোষ গল্পের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
প্রশ্ন: 'কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল!' - কোন্ কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল?
উত্তর: তপন মনে করত লেখকরা ভিন্ন জগতের প্রাণী। কিন্তু যখন সে জানতে পারল তার নতুন মেসোমশাই একজন লেখক, তখন বিস্ময়ে তার চোখ গোল গোল হয়ে ওঠে। এই অপ্রত্যাশিত তথ্যটি তার ভাবনার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল বলেই তার এমন প্রতিক্রিয়া হয়।
প্রশ্ন: তপনের গল্প পড়ে ছোটোমাসি কী বলেছিল?
উত্তর: ছোটোমাসি তপনের লেখা গল্পটি পুরোপুরি না পড়েই সেটির প্রশংসা করেছিলেন এবং গল্পটি কোথাও থেকে নকল করেছে কি না তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন ।
প্রশ্ন: "সূচীপত্রেও নাম রয়েছে"— সূচীপত্রে কী লেখা ছিল ?
উত্তর: প্রকাশিত গল্পের সূচীপত্রে লেখা ছিল — ‘প্রথম দিন’ (গল্প), শ্রী তপনকুমার রায়।
প্রশ্ন: "একটু 'কারেকশন' করে ইয়ে করে দিলে ছাপাতে দেওয়া চলে ।" — কে কী ছাপানোর কথা বলেছেন ?
উত্তর: তপনের নতুন মেসোমশাই, যিনি পেশায় একজন অধ্যাপক ও লেখক, তিনি 'প্রথমদিন’ নামক তপনের লেখা প্রথম গল্পটি ছাপানোর কথা বলেছেন ।
প্রশ্ন: 'সত্যিকার লেখক।' - এই উক্তির মধ্য দিয়ে তপনের মনের কোন্ ভাব প্রকাশিত হয়েছে বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: উক্তিটি তপনের মনের গভীর বিস্ময় এবং কৌতূহলের প্রকাশ। একজন লেখককে সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা তার কাছে অভাবনীয় ছিল, ফলে তার মনের এই অনুভূতি এই কথার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন: "আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।”- বক্তার কোন্ দিনটি সবচেয়ে দুঃখের?
উত্তর: বক্তা তথা তপনের জীবনে সবচেয়ে দুঃখজনক দিন ছিল যেদিন সে নিজের লেখা গল্পটি মুদ্রিত আকারে হাতে পেয়েছিল।
প্রশ্ন: 'এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের।' - কোন্ বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল?
উত্তর: তপনের ধারণা ছিল, লেখকরা সাধারণ মানুষের মতো হন না এবং তাঁদের বাস্তব জীবনে দেখা পাওয়া কঠিন। তাই যখন সে দেখে যে একজন লেখকও তার বাবা বা মামার মতোই সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে তার সন্দেহ ছিল।
প্রশ্ন: তপন মামার বাড়িতে কেন এসেছিল?
উত্তর: ছোটোমাসির বিবাহ উপলক্ষে তপন মামার বাড়িতে এসেছিল।
প্রশ্ন: তপনের বাবা-কাকা-মামাদের সঙ্গে লেখক মেসোমশাইয়ের কী কী মিল আছে?
উত্তর: লেখক মেসোমশাইয়ের দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক অভ্যাস ছিল যা তপনের বাবা-কাকা-মামাদের সাথে মিল ছিল। তিনিও দাড়ি কামান, সিগারেট খান, নিয়মিত স্নান করেন, খেতে বসেন, ঘুমোন এবং অবসর সময়ে সিনেমাও দেখেন।
প্রশ্ন: "রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।" - কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: এই প্রবাদবাক্যের অর্থ হল, প্রকৃত মেধা ও গুণ কেবল একজন অভিজ্ঞ ও সমঝদার ব্যক্তিই বুঝতে পারে। তপনের লেখার গুণাগুণ সাধারণ মানুষ নাও বুঝতে পারে, কিন্তু তার লেখক মেসোমশাই যেহেতু একজন সাহিত্যিক, তাই তিনিই সেই লেখার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে সক্ষম।
প্রশ্ন: 'তখন আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।' - কে, কেন আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়?
উত্তর: তপনের ছোটোমেসো যখন তার লেখা গল্পটি ছাপানোর কথা বলে, তপন প্রথমে সেটিকে নিছক মজা বলে ধরে নেয়। কিন্তু পরে মেসোর মুখের আন্তরিকতা দেখে সে অনুভব করে প্রস্তাবটি সত্যিই গুরুত্বসহকারে বলা হয়েছে, আর তখন সে আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।
প্রশ্ন: 'মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা।' - উক্তিটি কার? কোনটা মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে?
উত্তর: উক্তিটি তপনের ছোটোমাসির। তিনি মনে করেন, তপনের মেসোমশাই তপনের লেখাটি যদি একটু কারেকশন করে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন, তবে সেটাই তাঁর জন্য যথার্থ কাজ হিসেবে গণ্য হবে।
প্রশ্ন: "শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন,”- সংকল্পটি কী?
উত্তর: তপন এই দুঃখজনক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় সংকল্প করে যে, ভবিষ্যতে যদি সে কোনো লেখা প্রকাশের জন্য দেয়, তবে সে নিজেই তা সরাসরি প্রকাশকের কাছে দেবে— তা সে লেখা প্রকাশিত হোক বা না হোক।
প্রশ্ন: 'নতুন মেসোকে দেখে জানলে সেটা।' - তপন কী জেনেছিল?
উত্তর: নতুন মেসোকে দেখে তপন উপলব্ধি করে, গল্প লেখা শুধুমাত্র কোনো অদ্ভুত বা অসাধারণ মানুষের কাজ নয়; বরং একজন সাধারণ মানুষও গল্প লিখতে পারে। নতুন মেসোকে দেখে সেটাই জানল।
মাধ্যমিক বাংলা জ্ঞানচক্ষু গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: “যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা, সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।”- ‘আহ্লাদ’ হবার কথা ছিল কেন? ‘আহ্লাদ খুঁজে’ না পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: তপনের আহ্লাদ হওয়ার কথা ছিল এক ভেবে যে তার লেখা জীবনের প্রথম গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার নাম প্রকাশ পাবে। তপনের ছোটোমেসোর সহায়তায় তার গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, এবং সবাই মেসোর অবদান নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। অনেকেই বলেন, মেসো না থাকলে কখনোই ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদক তপনের লেখা গ্রহণ করতেন না। এসব আলোচনা এবং মন্তব্যের মধ্যে তপনের নিজস্ব পরিচিতি এবং কৃতিত্ব অনেকটাই অবহেলিত হয়ে পড়ে, যেন তার কোনো কৃতিত্বই নেই। তপনের লেখা গল্প প্রকাশিত হওয়ার পর, তপনের উচিত ছিল যে আনন্দ বা আহ্লাদ অনুভব করার, কিন্তু বাস্তবে তার মধ্যে কোনো আহ্লাদ সৃষ্টি হয় না।
প্রশ্ন: “পত্রিকাটি সকলের হাতে হাতে ঘোরে,” কোন্ পত্রিকা, কেন সকলের হাতে হাতে ঘুরছিল?
উত্তর: এখানে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তপনের জীবনের প্রথম লেখা গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনন্দ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তপনের লেখা প্রথম গল্পটি দেখে পরিবারের সবাই বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সবাই একে অপরকে পত্রিকা পড়তে উৎসাহিত করে একে অপরকে বলার চেষ্টা করে, “তপনের লেখা পড়ো, পত্রিকাটি দেখো!” এই ঘটনা পরিবারের মধ্যে একটি নতুন উৎসাহের সৃষ্টি করে, যা তপনের জন্য গর্বের বিষয়।
প্রশ্ন: “তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে।” তপনের এরকম অবস্থার কারণ বর্ণনা করো।
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের লেখক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তার কৈশোরে, তার মনের কল্পনাপ্রবণতায় সে মনে করত যে লেখক হতে হলে সাধারণ মানুষ হওয়া সম্ভব নয়, বরং লেখক আকাশ থেকে পড়া এক অদ্ভুত জীব। তবে, ছোটোমাসির বিয়ের সময় নতুন মেসোর সঙ্গে কথোপকথনে তপন বুঝতে পারেন যে তার লেখক হওয়ার ইচ্ছা বাস্তবতা হতে পারে।
নতুন মেসোর সাথে সময় কাটানোর ফলে তপনের গল্প লেখার ইচ্ছাশক্তি আরও বৃদ্ধি পায়। স্কুলে প্রথমবার ভর্তির অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তপন একটি গল্প লেখেন, যা ছোটোমাসির উদ্যোগে নতুন মেসোর কাছে পৌঁছায়। নতুন মেসোর সহায়তায় সেই গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ‘প্রথম দিন’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। কিন্তু, যখন তপন মায়ের নির্দেশে সেই গল্পটি পড়তে যান, তখন সে উপলব্ধি করে যে, মেসো তার লেখা গল্পটি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। যে গল্পটি তার নিজের লেখা নয়, সেই গল্পটি তার নামের সঙ্গে প্রকাশিত হওয়ার কারণে তপন অত্যন্ত অপমানিত হন। এই মানসিক আঘাতে তার লেখক হওয়ার স্বপ্ন যেন একটি বিষাদময় অভিজ্ঞতায় পরিণত হয় তাই তপন আর পড়তে পারে না বোবার মতো বসে থাকে।
প্রশ্ন: “তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।” কোন্ দিন তপনের এমন মনে হয়েছিল? তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর "জ্ঞানচক্ষু" গল্পের প্রধান চরিত্র তপন একটি গল্প লিখে সেটি প্রকাশনার জন্য পাঠায়। তার ধারণা ছিল যে, পত্রিকায় তার গল্প ছাপালে সে খুব গর্বিত হবে, কারণ তার লেখক হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হবে। তবে, যখন তপন 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায় তার গল্পটি ছাপানো দেখতে পায়, তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে। কারণ, তার লেখা গল্পটি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। নতুন মেসো, যিনি একজন লেখক, সে তার গল্পে অনেক পরিবর্তন করেছিল, এবং তপন গল্পে তার নিজের লেখা কোনও চিহ্নই খুঁজে পায়নি। গল্পটি এখন তার জন্য অপরিচিত মনে হচ্ছিল।
এ ঘটনার পর তপন গভীর হতাশা এবং যন্ত্রণা অনুভূত করে, কারণ তার নিজের লেখা গল্পে অন্যের প্রভাব ছিল প্রবল। তপন আশা করেছিল যে, তার গল্পে থাকবে তার ব্যক্তিগত ছোঁয়া, কিন্তু বাস্তবে তা কিছুই ঘটেনি। তার লেখা গল্পে অন্যের পরিবর্তনগুলি তাকে দারুনভাবে আঘাত করেছে, এবং গল্পটি পড়তে গিয়ে সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং এই অভিজ্ঞতায় তপন আর গল্পটি পড়তে পারেনা, এবং সে এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করে এবং বোবার মতো বসে থাকে কারণ তার আত্মসম্মান, আবেগ, এবং লেখক সত্তা সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
কথোপকথনে যোগ দিন