বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে? বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব এবং কারণ
বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে? সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার এই ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিকেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব, কারণ ও ফলাফল
বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে
সৌররশ্মি ক্ষুদ্রতরঙ্গ রূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে এসে ভূপৃষ্ঠে পড়ে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং তার পর আবার সৌররশ্মি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে দীর্ঘতরঙ্গরুপে মহাশূন্যে ফিরে যায় ফলে ভূপৃষ্ঠ পুনরায় ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, যেমন- নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, অধিকহারে কলকারখানা স্থাপন ও যানবাহন চালানো, ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে অর্থাৎ ট্রোপোস্পিয়ারে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সি.এফ.সি), নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্রীন হাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সৌররশ্মি দীর্ঘতরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফেরার সময় এই গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির দ্বারা শোষিত হওয়ায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার এই ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিকেই বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) নামে অভিহিত করেছেন।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১.৫-২.০° সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে এবং ২১০০ সালের মধ্যে ১.৮°C থেকে ৬.৩° সেলসিয়াস এর মতাে বৃদ্ধি পেতে পারে। বিগত ১০০ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.০৫ থেকে ০.০৭ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৮২৪ সালে বিজ্ঞানী জোসেক ফোরিয়ার প্রথম গ্রিনহাউজ প্রভাব আবিষ্কার করেন এবং পৃথিবীর যে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে আবিষ্কার করেন সোয়াতে আরহেনিয়াস।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ
বিশ্ব উষ্ণায়ন বর্তমান পৃথিবীর সর্বাধিক আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর কারণ বিজ্ঞানী ও গবেষক দলের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ গড়ে উঠেছে। একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক মনে করেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী আবার অন্য একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক মনে করেন, এটি মানুষের কর্মকান্ডের ফলশ্রুতি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পিছনে যে কারণই দায়ী থাকুক এর প্রভাব নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি আজও হয়নি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণসমূহ হলো :
দাবানল: বৃহৎ অরণ্যে গাছে গাছে ঘর্ষনের ফলে এবং শুকনো গাছে উল্কাপাতের আঘাতে আগুন ধরে গাছ, লতা, পাতা পুড়ে গিয়ে যে CO2, CO গ্যাস উৎপন্ন হয় তা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং দাবানলের ফলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়ে উষ্ণতা বেড়ে যায়।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় SO, N2O NO2 Co. CO2,CH4, H2S, CI, ধূলা, ছাই, তাপ, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ট উতপ্ত করে তোলে এবং অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূঅভ্যন্তরের লাভা ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসার ফলে এসব লাভা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে।
ইনসোলেশন বৃদ্ধি : ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মার্ক ফ্লিভার্ড ও জার্মান বিজ্ঞানী সামি সোলাঙ্কির মতে আগামী কয়েক বছরে সৌর বিকিরণ ও সৌর কলঙ্কের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চরম সীমায় পৌঁছাবে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার: শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প কারখানা, যানবাহন এবং গৃহস্থালি, অফিস-আদালত, মার্কেট, বন্দর প্রভৃতি স্থানে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে প্রচুর পরিমাণে CO2 CO, SO2, CH4 N2O, তাপ, এরোসল বায়ুমণ্ডলে মিশে গিয়ে বায়ুমণ্ডলকে ভয়ংকর হারে উত্তপ্ত করছে।
১ লিটার পেট্রলের দহনে ২১৭ কেজি CO2 বায়ুমণ্ডলে মিশছে।
শিল্পায়ন : শিল্পবিপ্লবের পর থেকে হাজার হাজার শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে এবং বর্তমানেও এই ধারা বজায় রয়েছে। শিল্পকারখানা গুলিতে জ্বালানি ও কাচা মাল হিসাবে কয়লা ব্যবহারের ফলে বিশাল পরিমাণে গ্রিন হাউস গ্যাস বায়ুতে মিশছে এবং শিল্পকারখানা গুলি প্রতিদিন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বায়ু, পানি ও মাটিতে নির্গত করে। এর ফলে বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন হয় যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
নগরায়ণ: শিল্পবিপ্লব ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সমগ্র বিশ্বে নগরায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।নগরায়নের ফলে গৃহ, অফিস-আদালত, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি নির্মাণ এবং নতুন যানবাহন, গৃহসামগ্রী, কলকারখানা প্রভৃতি থেকে CO2, CH, N2O, CFC ইত্যাদি বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা বিশ্বউষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
যানবাহন: যানবাহনে খনিজ তেল দহনের ফলে CO, CO2, কার্বন কণা নির্গত হয় এবং জেট বিমানে গ্যাসোলিন দহনের ফলে নির্গত N2O, জলীয় বাষ্প ভূ উষ্ণায়নের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। কোনো যান ৬ কিমি দূরত্বে ১ কেজি CO2 নিঃসরণ করে।
অরণ্যচ্ছেদন: উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। একটি পরিণত গাছ বছরে প্রায় 12 কেজি CO2 গ্রহণ করে কিন্তু বিগত কয়েক শতকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এবং ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধনের ফলে বনভূমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ফলে বায়ুতে CO2 পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে যার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তথা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে।
জৈব পদার্থের পচন: ধানখেত ও জলাভূমিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ, জৈব আবর্জনা স্তূপ, গবাদি পশুর মল ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পচে যায় এবং তা থেকে মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয় যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
CFC-র অত্যধিক ব্যবহার: গত চলিশের দশক থেকে উন্নত বিশ্বের দেশসমূহ বিভিন্ন বিলাসসামগ্রী যেমন-- রেফ্রিজারেটর, পারফিউম, রঙিন টেলিভিশন, এরোসল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র, প্লাস্টিক ফোম প্রভৃতি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের ফলে বায়ুতে ক্ষতিকর ক্লোরোফ্লোরো কার্বন বা CFC যুক্ত হচ্ছে।
তাপ ও আণবিকবিদ্যুৎ উৎপাদন: কয়লা, ডিজেল ও পারমাণবিক খনিজ পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় তাপ, ছাই, ধোঁয়া, CO, CO2, N2O NO. SO2, বাতাসে মুক্ত হয়ে গ্রিন হাউস প্রভাব বৃদ্ধি করে। ১০০০ MW ক্ষমতাযুক্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বছরে ৭০ লক্ষ টন CO2 নিক্ষেপ করে।
সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপ: পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় সমুদ্রের বিপুল জলরাশি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর উৎপন্ন তাপমাত্রার একটি বড় অংশ সমুদ্র শোষণ করে। বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করার ফলে সমুদ্রের পানির স্বাভাবিক ধর্ম বিনষ্ট হয়ে যায়। সমুদ্রের পানিতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলার ফলে একদিকে যেমন সামুদ্রিক জীবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে তেমনি সমুদ্রের পানি তাপ শোষণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সমুদ্রের পানিতে অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, অর্থাৎ বেড়ে যায়।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল
জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বের জলবায়ু বিপুল পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বর্তমানে চিন্তিত। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নতুন নতুন সমস্যা উৎপন্ন হয়েছে যেমন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তর গোলার্ধের উত্তর দিকের দেশে অতিবৃষ্টি ও দক্ষিণ দিকের দেশে অনাবৃষ্টির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর মেরু সন্নিহিত অঞ্চলে শীতকালে উষ্ণতা বৃদ্ধি আবার আফ্রিকা ও ভারত উপমহাদেশে জেট বায়ু প্রবাহের বিঘ্ন ঘটে এবং গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনা বৃদ্ধির কারণে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণতা আমাদের ঋতু পরিক্রমাতেও প্রভাব ফেলছে এবং ঋতু বৈচিত্র্যের রূপকে করেছে ক্ষুণ্ণ যার কারণে সারা বিশ্বজুড়ে ঋতুবৈচিত্র্য হ্রাস, শৈত্যপ্রবাহ তুষারপাত, তাপপ্রবাহ, বন্যা খরা বজ্রঝড় ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ বৃদ্ধি।
হিমবাহের গলন: বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে গত কয়েক দশকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার মধ্যে বিগত ২৫ বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ০.২ থেকে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস যার ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। গত ২০ বছরে সুমেরু অঞ্চলে প্রায় ৬% বরফ গলে গিয়েছে এবং গঙ্গোত্রী হিমবাহ প্রতি বছর ২৩ সেমি করে হ্রাস পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন আগামী কয়েক শতকে বিশ্বের ৩৩% বরফ গলে যাবে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, মেকং নদীর উৎস হিমবাহ গলে গিয়ে জলপ্রবাহ হ্রাস পাবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেরু ও পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ দ্রুত গলে বরফ গলা জল সমুদ্রে মিশে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে।সমুদ্রের গড় উচ্চতা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৬১ সাল থেকে সমুদ্রের গড় উচ্চতা প্রতি বছর ১.৮ মিলিমিটার হারে বাড়ছে এবং ১৯৯৩ সাল থেকে তা বেড়ে হয়েছে গড়ে বছরে ৩.১ মিলিমিটার। এই ভাবে চলতে থাকলে একুশ শতকের শেষদিকে পৃথিবীতে গড় সমুদ্রের উচ্চতা হবে ২৮ থেকে ৪৩ সে.মি. এবং পৃথিবীর অনেক শহর প্লাবিত হবে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছে নিম্নভূমি, প্লাবনভূমি এবং ব-দ্বীপ ও ক্ষুদ্রদ্বীপের অধিবাসীরা। এর ফলে ভারত, বাংলাদেশসহ ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, মিশর ইত্যাদি দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ব্যাপক প্লাবিত হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জলচক্রের পরিবর্তন ও ভূপৃষ্ঠীয় ও ভৌমজলের ঘাটতি: বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে জলচক্রের পরিবর্তন হচ্ছে ফলে নদী, হ্রদ প্রস্রবণ ও মাটির জল মাত্রাতিরিক্ত বাষ্পীভূত হয় এবং অধিকহারে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ফলে ভৌমজলতল নীচে নেমে যায় ফলে ভূপৃষ্ঠীয় ও ভৌমজলের সংকট দেখা দেয়, গুণমানের অবনতি ঘটবে, ফলে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয়।
সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে বিঘ্ন: সমুদ্র জলের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে লবণতা বৃদ্ধি পায় ফলে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণী মারা যাবে। অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হবে। ইতিমধ্যে গ্রেট বেরিয়ার রীফের ২০% প্রবাল ইতিমধ্যে নষ্ট হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য ধ্বংস : বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায় ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। সুমেরুর মেরু ভালুকের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। আন্টার্কটিকার পেঙ্গুইনরা অভ্যন্তরের দিকে সরে যাচ্ছে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য লুপ্ত হবে। হরিণ, বুনো মহিষ, জাভানা গন্ডার, বুনো শুয়োর, হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ : বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রতি বছর সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের একটি প্রত্যক্ষ ফল।
রোগ-ব্যাধির বিস্তার: বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলশ্রুতিতে রোগ-ব্যাধির বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমস্ত বিশ্বে ম্যালেরিয়া, এজমা, এলার্জি ও বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতিবছর ১০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি জনিত কারণে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১,৫৪,০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের উপায়
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস : কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার যথাসম্ভব কম করে CO, CO2, নির্গমন হ্রাস করতে হবে এবং এই সকল ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন বন্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে সকল কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সে সব কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তের প্রতি মারাত্মক সমর্থন প্রদান করতে হবে।
অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি: কয়লা, খনিজ তেল, গ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার কম করে অচিরাচরিত শক্তি যেমন সৌর, বায়ু, জোয়ার-ভাটা সমুদ্রস্রোত, ভূতাপ, গোবর গ্যাস শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
যানবাহন নিয়ন্ত্রণ: যানবাহনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালানির অপচয় ও ধোয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যাটারি ও বিদ্যুৎ শক্তিচালিত গাড়ি ব্যবহার বৃদ্ধি করা দরকার। উন্নত দেশে গুলিতে যানবাহনের ব্যবহার কমাতে হবে।
পরিবেশ শিক্ষা: পরিবেশ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। স্কুল, কলেজ স্তরে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ, ফলাফল ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পরিবেশ শিক্ষা প্রচলন করতে হবে এবং সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, বিজ্ঞানী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক কর্মসূচি: আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গৃহীত সকল কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবায়ন করতে হবে।
কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন হ্রাস : কার্বন ডাই-অক্সাইডের উৎপাদন হ্রাসের জন্য সাধারণত বৈদ্যুতিক বাল্বের ব্যবহার কম করতে হবে। এক্ষেত্রে কম প্রতিপ্রভা বা ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব বা led বাল্ব এর ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ বাল্ব এর তুলনায় ফুরোসেন্ট বা led বাল্বের আলো এবং কার্যক্ষমতা বেশি এবং এই বাল্ব গুলিরl বিদ্যুৎ খরচ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হারও কম।
মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ : জলাভূমিতে ধান চাষ বন্ধ, জলাভূমি সংস্কার, নাইট্রোজেন সারের বদলে জৈবসার ব্যবহার, পৌর জৈব আবর্জনা, মৃত জীবদেহ এবং পশুর মলমূত্র সঠিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে CH 3 N2O এর সঞ্চয় কমাতে হবে।
অরণ্য সংরক্ষণ : বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য অরণ্য সংরক্ষণ করতে হবে অরণ্যচ্ছেদন হ্রাস করতে হবে এবং বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ করতে হবে এবং কৃষি ও সামাজিক বনসৃজন করে সবুজ বলয় তৈরির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে গাছপালা বায়ুর অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন ত্যাগ করে।
আরও পড়ুনঃ
কথোপকথনে যোগ দিন