অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কাকে বলে? উদাহরণ ও বৈশিষ্ট্য
অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ কি
অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ হলো নদীর ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কার্যের মিলিত ভূমিরূপ । নদীর নিম্ন প্রবাহে দুটি বাঁক পরস্পরের নিকটবর্তী হলে নদী পুরোনো খাদ ছেড়ে নতুন খাদে প্রবাহিত হতে থাকে এবং পুরোনো খাদটি ঘোড়ার খুরের মতো দেখতে ভূমিরূপ গঠন হয় তাকে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ বলে। ইংরেজিতে 'Horseshoe lake' এবং 'Oxbow lake' বলে এবং একে বিল, ঝিল ও বাঁওড় নামে পরিচিত।
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কাকে বলে
নদী নিম্ন প্রবাহে সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হলে নদী বাঁকের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত জলধারা দুই তীরে বাধাপ্রাপ্ত হলে নদীবাঁকের অবতল তীরে ক্ষয় বেশি হয় এবং উত্তল তীরে সঞ্চয় বেশি হয় । এইভাবে নদীর বাঁক ক্রমশ বেড়ে স্থানে স্থানে বাঁকের মধ্যবর্তী স্থানে সংকৃণ হয়ে অবশেষে সামান্য ব্যবধানও লুপ্ত হয়ে জুড়ে যায় নদীর জল তখন অত্যাধিক বাঁক যুক্ত স্থানের পরিবর্তে নতুনভাবে সোজা পথে অগ্রসর হয়। এই অবস্থায় পরিত্যক্ত নদীবাঁক টি হ্রদের মতো অবস্থান করে । এই হ্রদ গুলি ঘোড়ার খুরের মতো দেখতে হয় বলে এই ধরনের হ্রদকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে ।
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের উদাহরন
গঙ্গা নদীর নিম্ন প্রবাহে অসংখ্য অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ লক্ষ্য করা যায়। মুর্শিদাবাদের মতিঝিল হল একটি প্রকৃষ্ট উদাহরন যা গঙ্গার নিম্ন প্রবাহে সৃষ্টি হয়েছে।
অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ এর বৈশিষ্ট্য
- অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ নদীর ক্ষয়কার্য এবং সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ।
- অশ্বের বা ঘোড়ার খুড়ের ন্যায় দেখতে বলে ইহার এইরূপ নামকরণ হয়েছে। ইংরেজিতে এটি কে oxbow lake ও বলা হয়।
- হ্রদ সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে মূল নদীর সাথে হ্রদ সংযুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে এটি মূল নদী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করে।
- এটি ঘোড়ার খুরের মত দেখতে হয় বলে ইহার এরূপ নামকরণ হয়েছে।
- বদ্বীপ অঞ্চলে এই হ্রদ বেশি দেখা যায়।
অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ কিভাবে সৃষ্টি হয়
প্রথম পর্যায় : নিম্ন প্রবাহে নদী আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয় কারণ নিম্ন প্রবাহে নদীর ঢাল কম তাই গতিবেগ কম ফলে নদী পথে কোনো কঠিন শিলা থাকলে তা অতিক্রম করতে পারে না আবার নদী খাতে সঞ্চয়ের ফলে বিশাল চড়ের সৃষ্টি হলে নদী আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়।
দ্বিতীয় পর্যায় : নদী বাঁকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা নদী বাঁকের অবতল তীরে ক্ষয় করে আবার এই ক্ষয়জাত পদার্থ সমূহ বিপরীত দিকে অর্থাৎ উত্তল তীরে সঞ্চয় করতে থাকে।
তৃতীয় পর্যায়: এইভাবে নদী বাঁক ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান সংকীর্ণ হতে থাকে এইভাবে একসময় দুটি বাঁকের মধ্যবর্তী অংশ মিলিত হয়ে যুক্ত হয়ে যায় ।
চতুর্থ পর্যায়: এইভাবে এক সময় পূর্বের নদিবাঁক মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং নদী তার পুরোনো প্রবাহ পথের পরিবর্তে সোজা পথে প্রবাহিত হয় বিচ্ছিন্ন নদী বাঁকটি মূল নদী থেকে আলাদা হয়ে অশ্বের খুড়ের ন্যায় দেখতে হ্রদের সৃষ্টি হয়।
কথোপকথনে যোগ দিন